স্বদেশী থেকে বর্তমান আন্দোলনের পুনরাবৃত্তি রবীন্দ্রনাথের চোখে

বিমলকে অন্তপুর থেকে বের করে সম্পূর্ণ বাহিরের জগতের সাথে মিলিয়ে নিজের ভালোবাসা পরখ করতে চেয়েছিলো নিখিলেশ। তাইতো ছিল তার অনেক আয়োজন। বিমল যেনো শুধু একজন দেবতার পূজা না করে হাজার টা দেবতাকে পরখ করে দেবতা নির্ধারণ করে এইতো স্বপ্ন ছিল বিমলের। আশ্চর্য হলেও সত্যি দীর্ঘদিনের সংস্কারে বিমলের মনে ভালোবাসা জিনিসটা পলিমাটির আস্তরণে বন্দী ছিল। সন্দীপের তীব্র সম্মোহনী তে মোহাচ্ছন্ন বিমলের সেই আস্তরণ দূর হয় ঠিকই কিন্তু দিনশেষে সেতো মোহই। রবী ঠাকুরের” ঘরে বাইরে” বিমল, নিখিলেশ,সন্দীপের দিনলিপির মনস্তাত্ত্বিক লড়াই ছাপিয়ে কখন যে রাজনৈতিক উপন্যাস হয়ে উঠেছে তা বোধ করি পুরোটা না পরে বোঝানো যাবে না।

স্বদেশী আন্দোলন কে কেন্দ্র করে যে কপটতা, যে ধর্মীয় অসহনশীলতা তা এই একবিংশ শতাব্দীতেও সূর্যের আলোর মতো সত্য। নিখিলেশ যার কাছে দেশ হচ্ছে দেশের মানুষ, দেশের মানুষ যা চায় তাই, অন্যদিকে বান্দে মাতারাম এর ধ্বনিতে সন্দীপ হচ্ছে জোর করে হলেও নিজের অধিকার আদায় করাকে সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করে দেশ ধর্ম প্রচার করতে চায়। তাইতো যখন গ্রামের গরীব লোকগুলো হাটে দেশী জিনিস বিক্রি করতে চাইনা সে আগুন জ্বালিয়ে দিতে দ্বিধা করে না সেই গরীবের শেষ সম্বল্টুকু, বাধ্য করতে ছল চাতুরী সবকিছুই তার কাছে সঠিক মনে হয়। রাজার নীতি হচ্ছে জোর করে আদায় , তাতেই অধিকার প্রতিষ্ঠা পায় অন্যদিকে নিখিলেশ ব্যক্তিস্বাধীনতায় অধিকার প্রতিষ্ঠার দিকে চেয়ে থাকে।

বিমল সেতো তার সমস্ত আত্মা দিয়ে নিখিলেশকেই ভালোবাসে, কিন্তু প্রবল স্রোতের মতো সন্দীপ যখন তার বীণাতে সুর তুলতে যায় তখন যেনো সে দ্বীধায় পরে, ভালোবাসার দ্বীধা। কিন্তু সন্দীপের নিষ্ঠুরতম আচরণ , চিন্তা, সবই যে শুধু মন্ত্র ,প্রকৃত দেশপ্রেমের সাথে যে এর অনেক ফারাক এ বোধ যখন বিমলের স্মরণে এলো তখন তার জীবনের সবচেয়ে বড় বোধদয় হল।
মাতৃরূপে দেশ যখন তার মাঝে সম্পূর্ণরূপে ধরা দিলো ততোদিনে সে অন্য বিমলা।

উপন্যাসে সন্দীপকে ভিলেন বানাতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত নতুন ভাবে দেখিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, বিমলের মাঝে নারীস্বত্বার পূর্ন বিকাশ এবং আইডলজির এক অসম্ভব শক্তিশালী চরিত্র নিখিলেশ।

Latest articles

Related articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here